ব্রেস্ট ক্যান্সার কি এবং তা থেকে বাঁচার উপায়।

 

ভূমিকা

ব্রেস্ট ক্যান্সার, বা স্তন ক্যান্সার, মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারগুলোর একটি। এটি স্তনের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া। পুরুষেরাও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন, কিন্তু এর হার খুবই কম। এই রোগটি সাধারণত মেটাস্টেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।


আরো পড়ুনঃ  দাঁতের রুট ক্যানেল কি

ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ

ব্রেস্ট ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি, তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা এর সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।

  1. জেনেটিক উপাদান: কিছু মানুষের পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে তাদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। ব্রেস ১ (BRCA1) এবং ব্রেস ২ (BRCA2) নামে দুইটি জিনের পরিবর্তন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

  2. হরমোনাল উপাদান: এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) গ্রহণ করেন তাদের জন্য ঝুঁকি বেশি।

  3. পরিবেশগত উপাদান: কেমিক্যাল এক্সপোজার, খাদ্যাভ্যাস, এবং জীবনযাত্রার ধরন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

  4. অন্যন্য কারণ: বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপান, অতিরিক্ত ওজন, এবং প্রাথমিক বয়সে ঋতুচক্র শুরু হওয়া ও দেরিতে মেনোপজ হওয়াও ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

আরো পড়ুনঃডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে কি কি করা উচিত

ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ

ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রথম দিকের লক্ষণগুলি ততটা স্পষ্ট না-ও হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:

  1. স্তনের মধ্যে বা স্তনের আশেপাশে গুটির মতো অনুভব করা।
  2. স্তনের আকার বা আকারের পরিবর্তন।
  3. স্তনের ত্বকে র‍্যাশ বা লালভাব।
  4. স্তনের চামড়া ঢিলা হয়ে যাওয়া বা কমলাতি চামড়ার মতো দেখানো।
  5. স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা অন্যান্য স্রাব নির্গত হওয়া।
  6. স্তনবৃন্তের আকৃতির পরিবর্তন বা স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।
 আরো পড়ুনঃএইচআইভি সম্পর্কে ভুল ধারণাগুলো কি কি

ব্রেস্ট ক্যান্সারের নির্ণয়

ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য কয়েকটি প্রধান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:

  1. ম্যামোগ্রাফি: এটি স্তনের এক্স-রে ছবি যা ক্যান্সারের অস্তিত্ব শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

  2. আলট্রাসাউন্ড: স্তনে কোন গুটি দেখা গেলে তার প্রকৃতি জানতে আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করা হয়।

  3. বায়োপসি: শরীর থেকে কিছু টিস্যু সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়।

  4. এমআরআই: এটি একটি উন্নত ইমেজিং পদ্ধতি যা স্তনের অভ্যন্তরীণ ছবি নিতে ব্যবহৃত হয়।

আরো পড়ুনঃপিরিয়ড হলে কি কি সমস্যা হয়

ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা

ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন, অবস্থান, এবং রোগীর সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর। সাধারণত ব্যবহৃত কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি হল:

  1. সার্জারি: স্তনের টিউমার বা আক্রান্ত অংশ অপসারণের জন্য সার্জারি করা হয়। লুমপেকটমি এবং মাসটেকটমি হল দুটি প্রধান সার্জারি পদ্ধতি।

  2. রেডিয়েশন থেরাপি: রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।

  3. কেমোথেরাপি: ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য কেমিক্যাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

  4. হরমোন থেরাপি: হরমোনের স্তর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করা হয়।

  5. টার্গেটেড থেরাপি: নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষগুলির বিরুদ্ধে কাজ করে এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

আরো পড়ুনঃ বজ্রপাতের সময় কোথায় থাকা উচিত

ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়

  1. নিয়মিত চেক-আপ: নিয়মিত ম্যামোগ্রাফি এবং নিজে স্তনের পরীক্ষা করা ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

  2. সুস্থ জীবনযাপন: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

  3. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

  4. অ্যালকোহল গ্রহণ কমানো: অ্যালকোহল সেবন কমিয়ে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যায়।

  5. হরমোন থেরাপি সীমিত করা: দীর্ঘ সময় ধরে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ না করা ভালো।

  6. প্রতিরোধমূলক সার্জারি: উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক মাসটেকটমি করা হতে পারে।

পরিশেষে

ব্রেস্ট ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ, তবে সময়মত নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সবার উচিত নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং যেকোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। স্তন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়গুলো মেনে চললে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url